
দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর ৬ কিলোমিটার। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে বেলা ১১টার দিকে সেতুর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারের ওপর ৪০তম স্প্যান ‘টু-ই’ সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, ৩৯তম স্প্যান বসানোর ৮ দিনের মাথায় বসানো হলো এ স্প্যানটি। এখন ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সবশেষ স্প্যানটি বসানো হলেই ৬ হাজার ১৫০ মিটার পুরো সেতু দৃশ্যমান হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ৪১তম স্প্যানটিও বসানো হবে।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের আগেই মাওয়া প্রান্তের ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর ৪১ ও শেষ স্প্যান (২-এফ) বসানোর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগুবেন প্রকল্পের দেশিবিদেশি প্রকৌশলীরা। সেটি বসলেই দৃশ্যমান হবে সেতুটির পুরো ৬.১৫ কি.মি।
গত দু মাস (অক্টোবর ও নভেম্বরে) সবচেয়ে বেশি স্প্যান বসানো হলো। প্রতিমাসে রেকর্ড ৪টি করে বসেছে ৮টি স্প্যান। মাওয়া প্রান্তে যেখানে মাত্র দুইটি স্প্যান ছিলো, সেখানে এখন পুরো ১০টি স্প্যানে দৃশ্যমান দেড় কিলোমিটার সেতু। পাড়ের সাথে সেতুর মিলন ঘটেছে, এখন দুই প্রান্তও মিলবে এ দুটি স্প্যান বসানো হলে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সবশেষ যে স্প্যানটি গত ২৭ নভেম্বর বসেছে, শুক্রবার তার পাশেই ১১ ও ১২ নম্বর পিলারে বসানো হয় নতুন স্প্যান। তবে এ স্প্যানটি বসাতে কারিগরি কিছু কাজ আগে সেরে রাখার উদ্দেশ্যে একদিন আগেই বৃহস্পতিবার এটিকে পিলারের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। শুক্রবার পিলারের উপর তোলার আগ পর্যন্ত মাঝনদীতে স্প্যানবাহী ক্রেনটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সেনাবাহিনীর টহল বোট।
প্রকল্পের প্রকৌশলী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টক জেটি থেকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ক্রেনবাহী ভাসমান জাহাজ তিয়ান-ই দেড়শো মিটার দৈর্ঘ্যে ৪০তম স্প্যানটিকে বহন করে নিয়ে যায় গন্তব্যে। এরপর দুই খুঁটির মাঝে নোঙরে রাখা হয়।
শুক্রবার সকালে শীতের কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর শুরু হয় স্প্যান বসানোর কাজ। ক্রেনের সাহায্যে স্প্যানটিকে খুঁটির উচ্চতায় তোলা ও দুই খুঁটির ওপর স্থাপন করার ধাপগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হয়। পুরো সেতু দৃশ্যমান করতে দ্রুত কাজ করে যাচ্ছেন প্রকৌশলীরা। এর আগে গত ২৭ নভেম্বর পদ্মাসেতুর ৩৯তম স্প্যান বসানো হয়। অক্টোবর ও নভেম্বরেই বসানো হয় চারটি করে মোট আটটি স্প্যান।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মাসেতু। এরপর একে একে বসানো হয় স্প্যানগুলো। বহুমুখী এ সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
মোট ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সব কয়েকটি পিলার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।